নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন

প্রধান তিন প্রার্থীর শেষ বিতর্কের উত্তাপ

ডেস্ক রিপোর্ট
  ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৯


নিউইয়র্ক সিটির এক আলোচিত রাত। ২২ অক্টোবর বুধবার। মেয়র নির্বাচনে প্রার্থীদের শেষ সরাসরি বিতর্ক। আলো-ঝলমলে মঞ্চে হাজির ছিলেন তিন প্রধান মেয়রপ্রার্থী—জোহরান মামদানি (ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টরানার), অ্যান্ড্রু কুওমো (স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক গভর্নর) এবং কার্টিস স্লিওয়া (রিপাবলিকান প্রার্থী)।
ক্রমবর্ধমান গৃহমূল্য, যানজট, ভাড়া ও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন—এই সবকিছু নিয়েই শুরু হয় তীব্র আলোচনা। তবে পুরো বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এক মুহূর্ত, যখন কুওমো হঠাৎ মামদানিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি যদি মেয়র হন, তাহলে ট্রাম্প আপনাকে এমনভাবে চেপে ধরবে যে সামলাতে পারবেন না।”
এই মন্তব্যে হলজুড়ে ফিসফাস। মামদানি থেমে থাকেননি। তিনি তৎক্ষণাৎ পাল্টা জবাবে বলেন—“কুওমো আসলে ট্রাম্পের পুতুল, যিনি নিজের রাজনৈতিক অতীত দিয়ে এই শহরের বিশ্বাস হারিয়েছেন।”
অন্যদিকে কার্টিস স্লিওয়া বলেন, শহর ও ফেডারেল সরকারের সম্পর্ক অতিরিক্ত টানাপোড়েনে গেলে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁর মতে, নেতৃত্বে সংযম ও কূটনীতি থাকা জরুরি।
উত্তেজনায় ভরে ওঠে মঞ্চ। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির চোয়ালে ছিল দৃঢ়তা ও লড়াকু ভঙ্গি, কুওমোর মধ্যে দেখা যায় কিছুটা ক্লান্তি, আর স্লিওয়া ছিলেন তুলনামূলক শান্ত ও স্থির।
কুওমো জোর দিয়ে বলেন—বড় সিটি পরিচালনা করা ছোট কাজ নয়। বড় দায়িত্বে সামান্য ভুলও বড় বিপদের কারণ হতে পারে। তাঁর মূল যুক্তি ছিল—“মামদানি কখনো কোনো বড় পদে কাজ করেননি।”
তবে মামদানি এর জবাবে বলেন, “অভিজ্ঞতা মানেই যোগ্যতা নয়। আমি প্রশাসনের করিডোরে নয়, মানুষের জীবনের মাঠে কাজ করেছি। আমি জানি সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচে, কীভাবে সংগ্রাম করে।”
মামদানি সিটির মূল ইস্যু হিসেবে তুলেছেন আর্থিক বৈষম্য, ভাড়া বৃদ্ধি ও সাধারণ মানুষের টিকে থাকার লড়াই। তাঁর অবস্থান, যদি সাধারণ মানুষ নিউইয়র্কে থাকা চালিয়ে যেতে না পারে, তাহলে এই শহরের উন্নয়ন অর্থহীন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে কুওমো ও স্লিওয়া উভয়ের আশঙ্কা—অতিরিক্ত প্রগতিশীল নীতি, বিশেষ করে কর বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় বাড়ালে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। মামদানির প্রস্তাবে কর বাড়ানো ও ভাড়া স্থিত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যা বিতর্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
কুওমো বলেছেন, সিটি ও ফেডারেল সরকারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন, তবে প্রয়োজনে কড়া অবস্থানও নিতে হবে। তাঁর মতে, ট্রাম্পের মতো শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে হলে দৃঢ় নেতৃত্ব অপরিহার্য।
মামদানি বলেছেন, “আমি প্রশাসন ও জনগণকে একসঙ্গে কাজে লাগাতে চাই। কিন্তু যদি ফেডারেল নীতি সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে, তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব।” তাঁর মতে, সহযোগিতা ও প্রতিবাদের মধ্যে ভারসাম্যই সফল নেতৃত্বের চাবিকাঠি।
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ—মামদানির মুখে ছিল এক ধরনের পুরনো যোদ্ধার দৃঢ়তা, কুওমোর মুখে ক্লান্তি, আর স্লিওয়ার মধ্যে স্থিরতার ছাপ। এই মানসিক প্রতিচ্ছবি ভোটারদের মনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, মামদানি এগিয়ে আছেন প্রায় পঁয়তাল্লিশ শতাংশ সমর্থনে, আর কুওমোর অবস্থান ততটা শক্ত নয়। তবে প্রচারণার শেষ মুহূর্তে বিতর্কের প্রতিক্রিয়া ভোটের সমীকরণ বদলে দিতে পারে।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন কেবল ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতা নয়, এটি আদর্শ ও প্রশাসনিক দক্ষতার দ্বন্দ্ব। মামদানি ও কুওমোর মধ্যে লড়াই এক নতুন প্রজন্মের চিন্তা ও পুরনো অভিজ্ঞতার সংঘাত।
ভোটারদের সামনে এখন প্রশ্ন একটাই—বক্তৃতা ও প্রতিশ্রুতির বাইরে, এই সিটির শত কোটি ডলারের বাস্তব পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে? যে কথা আজ মঞ্চে বলা হয়েছে, তার প্রমাণ দিতে হবে আগামী দিনের কর্মে—নিউইয়র্কের প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি ঘরে। ৪ নভেম্বর নির্বাচন। দিন যতোই এগিয়ে আসছে উত্তেজনাও বাড়ছে। খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন বলছেন, মামদানিকে সম্ভবত থামানও যাচ্ছে না। নিউইয়র্ক হয়তো প্রমাণ করবে, জনতার জাগরণ ঘটলে কোন শক্তিই এ জাগরণকে ঠেকাতে পাড়ে না !