নিউইয়র্কে বাংলাদেশি চার ব্যাংকের আয়োজনে “অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট” প্রোগ্রামে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রবাসীদের স্বদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
"অফশোর" ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট করে প্রবাসীরা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ পেতে পারেন। সম্পূর্ণ অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রবাসীদের অর্থ সহজেই ডলারে বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং ডলারেই তা ফেরত পাবেন। এ বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এতে করে প্রবাসীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশেরও লাভ হবে। প্রবাসীদের বিনিয়োগের অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রবাসীরা অফশোর ব্যাংকিং বিনিয়োগের মাধ্যমে ভূমিকা রাখার বিশাল সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে।
২৪ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক লাগুরডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়ট হোটেলে চার ব্যাংকের উদ্যোগে আউটরিচ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়দুর রহমান।
অফশোর ব্যাংকের ধারণা এবং এ কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেইন, ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মোরশেদুল কবির এবং সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়দুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দেশে কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়নি। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন সরকার বাংলাদেশে কোন ব্যাঙ্ককে দেউলিয়া হতে দেবে না। দেশে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রবাসীরা আস্থার সাথে বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের চারজন মুখপাত্রকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করার জন্য। যেকোনো সাংবাদিক ব্যাংকের যেকোনো বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কোনো বাঁধা নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের চারটি শীর্ষ চারটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ নির্বাহীরা অফশোর ব্যাংকিং ডিপোজিট কর্মসূচিতে সহজেই বিনিয়োগের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। ডিপোজিটের মেয়াদ তিন মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত করা যাবে। সম্পূর্ণ ফি ছাড়া এ বিনিয়োগের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা যাবে। জমাকৃত অর্থ সহজেই ইন্টারেস্ট সহ বিদেশে ট্রান্সফার করা যাবে। ইন্টারেস্ট আয়ের উপর কোনো কর আরোপ করা হবে না। সহজ উপায়ে এমন বিনিয়োগের ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রবাসী বিনিয়োগকারী হিসেবে কিছু ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধাও পাবেন বলে বলা হয়েছে।
অফশোর ব্যাংক ধারণাটি পুরোনো হলেও কর্মসূচিটি বাংলাদেশের জন্য নতুন এবং এ নতুন কর্মসূচি প্রবাসীদের জন্য দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বলেছেন, এ কর্মসূচি সম্পর্কে ব্যাংকের নির্বাহীরা আরও তথ্য সরবরাহ করলে প্রবাসে থাকা সরকারের প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের এসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের আরও ঘন ঘন প্রবাসে উপস্থিত হয়ে এ কর্মসূচির জন্য প্রবাসীদের সাথে মতবিনিয়ময় করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ডাচ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ব্যাংক। বাংলাদেশের যে কয়েকটি ব্যাংক আন্তর্জাতিক রেটিং কোম্পানি দ্বারা রেটিং করা, ডাচ বাংলা ব্যাংক এরমধ্যে অন্যতম। গত ২ বছর থেকে ত্রিপল এ রেটিং পাওয়া ডাচ বাংলা ব্যাংকে যেকোনো অনাবাসী বাংলাদেশি নিজের নামে বা আপনজনের নামে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এবং বিনিয়োগের অর্থ লাভ সহ যেকোনো সময় বিদেশে বসেই নিয়ে আসতে পারবেন। তিনি দেশে বিনিয়োগের এ সুযোগ গ্রহণের জন্য ডাচ বাংলা ব্যাংক সহ অন্যান্য ব্যাংকের অফশোর ডিপোজিট স্কিমে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।