জ্যাকসন হাইটসের ৬৯ স্ট্রিট থেকে ৮৭ স্ট্রিটে সাজ সাজ রব। চারদিকে আনন্দের বন্যা। বাংলাদেশের প্রতি প্রাণভরা ভালোবাসা, স্মৃতি, শ্রদ্ধা নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ডে প্যারেড। এই প্যারেডে প্রবাসী বাংলাদেশি, বাংলাদেশি আমেরিকান, আমেরিকান, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়। ২৬ মে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নিউইয়র্র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এই প্যারেডের উদ্বোধন করেন। প্যারেডে অংশগ্রহণ করার জন্য আগে থেকেই শত শত মানুষ আসতে থাকেন। অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে মেয়র অ্যাডামসকে আইকনিক মার্শাল উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। মীর বাশারসহ কমিউনিটির বেশ কয়েকজন নেতা তাকে এই উত্তরীয় পরিয়ে দেন। মেলার গ্র্যান্ড মার্শাল থাকবে না- এটি বলা হলেও শেষ পর্যন্ত শাহ নেওয়াজই ছিলেন গ্র্যান্ড মার্শাল। ভিআইপি মার্শাল ছিলেন গিয়াস আহমেদ, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, ফাহাদ সোলায়মান, নুরুল আজিম, কাজী সাখাওয়াত আজম, মোহাম্মদ এ কাদের শিশিরসহ কয়েকজন। র্যালিতে অংশ নেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী।
মেয়রকে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাকে ক্রেস্টসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। মেয়র এরিক অ্যাডামস বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রশংসা করেন এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তাকে সম্মানিত করায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এ সময় মেয়র অফিসের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মীর বাশার উপস্থিত ছিলেন। তিনিও কমিউনিটির সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশি কমিউনিটিকে একটি বড় কমিউনিটি উল্লেখ করে মেয়র অ্যাডামস তার পক্ষ থেকে কমিউনিটিকে সহযোগিতা করার আশ^াস দেন। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ করে প্যারেডে যোগ দেন। তার নেতৃত্বে প্যারেড এগিয়ে চলে। তার আগে ছিল অশ্বারোহী বাহিনী এবং নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব পুলিশের সদস্যরা। এরপর ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সদস্যরা। এরপর সকল সংগঠন আস্তে আস্তে র্যালি করে ৬৯ স্ট্রিট থেকে ৮৭ স্ট্রিট পর্যন্ত যান। এ সময় ৬৯ স্ট্রিট থেকে ৮৭ স্ট্রিট পর্যন্ত ৩৭ অ্যাভিনিউর পুরো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মেয়রের অফিসের স্টাফ ও নিউইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পুলিশ। প্যারেডে কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহ শহিদুল হক, শাহ নেওয়াজ, গিয়াস আহমেদ, ফাহাদ সোলায়মান, নুরুল আজিম, মোহাম্মদ এ কাদের শিশির, মোহাম্মদ আলী, মইনুল হক চৌধুরী হেলাল, মহিউদ্দিন দেওয়ান, জাসির, রাশেক মালিক, জামিল সারোয়ার, রানো নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, বিন্দুকনা, সোনিয়া সিরাজ প্রমুখ। গণমাধ্যমের বিভিন্ন সম্পাদক ও সাংবাদিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। মেয়রের সঙ্গে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের বেশ কয়েকজন কুশল বিনিময় করেন। এ ধরনের একটি সফল আয়োজন করতে পেরে আয়োজকেরা দারুণ খুশি।
প্যারেডের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ র্যালিতে অংশ নেন। প্যারেডে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি। প্যারেডে বাংলাদেশের জাতীয় পশু, পাখি, ফুলের প্রতীক তৈরি করা হয়। সেগুলো বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের হাতে ছিল। প্যারেডে ৫১ জন মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন স্টেট থেকে যোগ দেন। এবারই প্রথম জ্যাকসন হাইটসে প্যারেডের আয়োজন করা হয়।
ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ও ডেভেলপমেন্ট ইউএসএ এবং বাংলাদেশ ডে প্যারেডের সভাপতি শাহ শহীদুল হক ও আহ্বায়ক শাহ নেওয়াজ প্যারেডে আগত অতিথিদের বরণ করেন। প্রথমে দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে প্যারেডের কাজ আরম্ভ হয়। প্যারেডের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সবিতা দাস এই পর্ব পরিচালনা করেন। সঙ্গে ছিলেন বাফার ফরিদা ইয়াসমিন এবং সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।