বিশ্বের রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির সৌন্দর্য্য বর্ধনে সংযোজিত হলো জিহান ওয়াজেদ’র আঁকা আরো একটি ম্যুরাল। ইতোমধ্যেই সিটির বিভিন্ন এলাকায় শোভা পাচ্ছে তার শিল্প কর্মের অনেক নির্দশন। বাংলাদেশী আমেরিকান প্রতিভাবান তরুণ শিল্পী জিহান ওয়াজেদ। আমেরিকার মূলধারায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ম্যুরাল এঁকে সম্প্রতি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে তার আঁকা ম্যুরালে স্থান পাচ্ছে বাংলাদেশের চিরায়ত ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী।
অতি সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার বাংলাদেশী অধ্যুষিত হিলসাইড এভিন্যু ও ১৬৯ স্ট্রীটের কর্ণারে একটি ম্যুরাল একেঁছেন জিহান। স্থানীয় এস্টেট ফার্মেসীর বিশাল দেয়ালে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের ধারায় অংকিত ম্যুরালটির থীম হচ্ছে “চেইজিং ড্রিমস”। নিউইয়র্ক সিটির অনুন্নত কমিউনিটির উন্নয়নে নিবেদিত অলাভজনক সংগঠন ‘ভালো’ সার্বিক সহযোগিতা করেছে ম্যুরালটি নির্মাণে। ম্যুরালটিতে গ্রামবাংলার বিস্তীর্ণ সর্ষে ফুলের মাঠের মধ্য দিয়ে ছোট ছেলেমেয়েরা ছুটছে বাংলা অক্ষরের দিকে। এই চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের প্রকৃত এবং প্রাণবন্ত একটি প্রতিচ্ছবি।
যার মধ্য দিয়ে আমাদের মূল শেকড়, ঐতিহ্য ও ভাষাগত পরিচিতির সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় বহুজাতিক নিউইয়র্ক মহানগরীতে।
জিহান ওয়াজেদের আঁকা এই ম্যুরালটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিলো গত ২৪ জুন, সোমবার বিকেলে। বাংলাদেশী হিউম্যানিটেরিয়ান এইড এন্ড লিডারশীপ আউটরিচ-ভালো আয়োজিত ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, পদস্থ কর্মকর্তা ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ভালোর প্রাণপুরুষ শাহারিয়ার রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনটির একদল তরুণ-তরুণী চমৎকার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পড়ন্ত বিকেলে। ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যুরালটির উদ্বোধন করেন শিল্পী জিহান ওয়াজেদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিথি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও ভালোর পুরো টিম সহ কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।
‘ভালো’র পাবলিক রিলেশন ডাইরেক্টর শাহারিয়ার নবীর উপস্থাপনায় অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলমেম্বার নাতাশা উইলিয়ামস, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের চীফ এডমিনিস্ট্রেটর ও ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মীর বাশার, শিল্পী জিহান ওয়াজেদ, নিউইয়র্ক সিটি স্মল বিজনেস সার্ভিসেসের নির্বাহী পরিচালক ডেভিড কোরিস ও সারোগেট কোর্ট জাজ কেসেন্দ্রি জনসন। ম্যুরালটি উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন জিহানের পিতা সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ খান, সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, ঠিকানার অনুভা শাহীন, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবিএম ওসমান গণি, সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ডিএইচ কেয়ারের অন্যতম সত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম মঞ্জু, নিউইয়র্ক সিটির সিএইউ’র সিনিয়র লিয়াসন মোহাম্মদ বাহে, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বারস, আমেরিকান ইয়ুথ সকার একাডেমী ফর বাংলাদেশীজ, বেঙ্গলীস অব নিউইয়র্ক-বনি, বাংলাদেশী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্মকর্তা, রোকেয়া আকতার কমিউনিটি কো-অর্ডিনেটর অব কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নী অফিস, স্টেট ফার্মেসী ও ‘ব্যবসা’র কর্মকর্তাগণ।
অতিথি বক্তাগণ শিল্পী জিহান ওয়াজেদ ও ‘ভালো’র ভূয়সী প্রশংসা করেন। জিহানকে অত্যন্ত মেধাবী শিল্পী বলে মন্তব্য করেন অতিথিগণ। তারা বলেন, এ ধরণের শিল্প কর্মের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক সিটির পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বহুজাতিক এই নগরীতে বাংলাদেশের প্রকৃতি, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত হবে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির মানুষ। তারা বলেন, ‘ভালো’র গৃহীত সেবাধর্মী কর্মকান্ড বাংলাদেশী কমিউনিটিকে আরো এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। ‘ভালো’র সাথে সেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তাগণ। শিল্পী জিহান ওয়াজেদ তার বক্তব্যে ‘ভালো’ ও স্টেট ফার্মেসীকে ধন্যবাদ জানান তাকে ম্যুরালটি আঁকার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। জিহান বলেন, জ্যামাইকার এই এলাকার সাথে তার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এই এলাকায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। এখানেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনা করেছেন। এখানে মুর্যাল আঁকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জিহান। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতি।
উল্লেখ্য “চেইজিং ড্রিমস”-ম্যুরালটি অঙ্কনে জিহানকে সহযোগিতা করেন অ্যামিথিস্ট মনেট। অপরদিকে ভালো’র সৌজন্যে অংকিত ম্যুরালটি বাংলাদেশী কমিউনিটিকে উপহার দিতে সহযোগিতা করেছে স্টেট ফার্মেসী ও বাংলাদেশী আমেরিকান বিজনেস সোসাইটি অব হিলসাইড এভিন্যু-‘ব্যবসা।’ হিলসাইড ও ১৬৯ স্ট্রিটের এই স্থানটিকে দু’বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ এভিন্যু হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। জিহানের আঁকা ম্যুরালটি উদ্বোধনীতে না থাকতে পারলেও নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এ্যাডামস ও কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস ব্যক্তিগতভাবে গত সপ্তাহে ম্যুরালটি দেখতে আসেন এবং ম্যুরালটির সামনে সেলফি তুলেন তারা।
উল্লেখ্য জিহান চিত্রাঙ্কন ছাড়াও ভাস্কর্য, কোরিওগ্রাফি এবং সৃজনশীল নতুন মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। তার শিল্পকর্ম দেয়াল চিত্র ও নৃত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তিনিই প্রথম অগ্রবর্তী বাস্তববাদী শিল্পী। জিহান ওয়াজেদের স্টুডিও ম্যানহাটানের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। তার অন্যতম শিল্প কর্মের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন, নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স বিলি জিন কিং ন্যাশনাল টেনিস সেন্টার, জনএফ কেনেডি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-ফোর, কুইন্স হাসপাতালে সাড়ে ১২’শ বর্গফুটের বিশালকায় ম্যুরাল, এস্টোরিয়ায় ৭০০ ফুট দীর্ঘ এ্যায়ুগমেন্টেড রিয়ালিটি ম্যুরাল, নিউজার্সির ওয়ার্ল্ড কাপ স্টেডিয়াম ও এস্টোরিয়ায় ১৭৭ ফিট দীর্ঘ ম্যুরাল ‘ওয়েলকাম এস্টোরিয়া ম্যুরালটি অন্যতম। এছাড়া নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন বরোতে বড় বড় ম্যুরাল অঙ্কন করেছেন জিহান ওয়াজেদ।