নিউইয়র্ক সিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

ডেস্ক রিপোর্ট
  ০৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮

 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১০৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও ১০৪তম জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার (১ জুলাই) সিটির কুইন্সের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাইদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ঢাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠান শুরু হয় সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর সকলে মিলে গেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যানথেম। পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ছিলেন শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে আয়োজনকে রাঙিয়ে তোলেন গোলাম মোস্তফা।

অনুষ্ঠানের সিংহভাগজুড়ে ছিল স্মৃতিচারণ। ক্যাম্পাস জীবনের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন ফরিদা চৌধুরী, মনজুর চৌধুরী, সিলভিয়া সাবেরিন, মোসা. ওয়াহিদা শামসুন, মো. আবদুল কাইয়ুম, সজল রোশান, লুবানা রশিদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন দিনগুলো নিয়ে আরো কথা বলেছেন কাজী জহিরুল ইসলাম, সুখন গোমেজ, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, এম আরেফিন টুলু, রুবি আরেফিন, মোহাম্মদ মুজিবুল হক, নাজিয়া আহমেদ চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, ইকবাল মোরশেদ, উমামা সিদ্দিকা ও রওশন আরা বেগম।
ফরিদা চৌধুরী স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ঢাবির অর্থনীতি বিভাগ থেকে আমি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি ১৯৮১ সালে। ওই সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল অসাধারণ সম্পর্ক। আমরা একটা পারিবারিক আবহে কাটিয়েছি ক্যাম্পাস জীবন। এটি আমাদেরকে ভাল মানুষ হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।’
মোসা. ওয়াহিদা শামসুন বলেন, ‘ঢাবির শিক্ষার্থীরা শুধু বাংলাদেশকেই আলোকিত করেননি, প্রবাসের মাটিতেও দেশকে উজ্জ্বল করে চলেছেন। এ প্রতিষ্ঠান হল আমাদের অনুভূতি আর ভালবাসার জায়গা। তাই, বিদেশের মাটিতে বসে প্রাণের প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করতে পারাটা ভীষণ আনন্দদায়ক।’
সিলভিয়া সাবেরিন বলেন, ‘যখন থেকে এ অনুষ্ঠানের সংবাদ পেয়েছি, তখন থেকেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মনের আঙিনায় এখনো ভাসছে সেই টিএসসি, কলাভবন, নীলক্ষেত, মলচত্বর, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি আর রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের প্রতিটি স্মৃতি।’

মনজুর চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি খুবই দুষ্টু ছিলাম। এমন কোন ডিপার্টমেন্ট ছিল না, যেখানে আমার কোন বন্ধুবান্ধব ছিল না। সিনিয়র-জুনিয়র সকলে আমাকে খুব আদর করতো। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই জীবনটা আমি খুবই মিস করি। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রাণের এ প্রতিষ্ঠান আরো এগিয়ে যাবে।’
মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমি আসলে ঢাবির থেকে অনার্স-মাস্টার্স করিনি। অ্যাকাউন্টিংয়ের ইভিনিং কোর্সে এমবিএ করেছি। তাই, আপনাদের মত আমার হলের কোন স্মৃতি নেই। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি আমার আবেগ রয়েছে। রেগুলার স্টুডেন্ট না হলেও দেশসেরা এ প্রতিষ্ঠানে পড়তে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।’
লুবানা রশিদ বলেন, ‘আমি পড়েছি ফিলোসফি ডিপার্টমেন্টে, এটাচড ছিলাম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। দারুণ সময় কেটেছে পুরো ক্যাম্পাস জীবন। আমি প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটির সাথে জড়িত ছিলাম। সিনিয়রদের কাছ থেকে প্রচুর সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষকরাও আমাদেরকে দারুণভাবে আগলে রেখেছেন।’
সুখন গোমেজ বলেন, ‘আমি আজ আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছি। কারণ, ঢাবির আমাদের ভীষণ আবেগের এক জায়গা। আমি আরেকটু বেশি আবেগে আপ্লুত হই এ কারণে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র আন্দোলন শামসুনন্নাহার হল থেকে তৈরি হওয়া শিক্ষার্থী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলাম।’
জাতিসংঘের কর্মকর্তা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাবি অসংখ্য মেধাবী ও সফল মানুষের জন্ম দিয়েছে। তবে, ইদানীং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সেই প্রশ্ন যে সম্পূর্ণ অমূলক, তাও নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে হবে।’
রওশন আরা বেগম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যারা ঢাবির প্রাক্কতন শিক্ষার্থী বসবাস করছি, আমাদের মাঝে কীভাবে আরো সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়, সেটা চিন্তা করতে হবে। শুধু বছরান্তে নয়, আমরা এভাবে মিলিত হতে চাই কিছু দিন পরপর।’
মোহাম্মদ মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ঢাবির গ্রাজুয়েটদের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সমর্থ হব।’
গেল কয়েক বছর ধরেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাইদের উদ্যোগে নিউইয়র্কে এ আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতিটি আয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ঢারিব প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেয়া হয়। এ বছর সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সজল রোশানকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
প্রিয় প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন উদযাপনের অন্যতম অংশ ছিল কেক কাটা। এরপর নির্মল আড্ডা আর গল্প-গুজবে মেতে ওঠেন সকলে। ফটোসেশন পর্বে চলে দলবেঁধে ছবি তোলা।