ফোবানা চেয়ারম্যান অ্যাটর্ণী মোহাম্মদ আলমগীর

যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য

সম্মেলন ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর  
ডেস্ক রিপোর্ট
  ২০ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৪৯

অ্যাটর্ণী মোহাম্মদ আলমগীর। পুরো যুক্তরাষ্ট্রের পরিচিত মুখ অ্যাটর্ণী আলমগীর দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে বার হাজারেরও অধিক প্রবাসী বাংলাদেশীকে আইনী সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার পথ করে দিয়েছেন। তাদের অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে গেছেন। তাদেরই বংশধরেরা আমেরিকায় আভিবাসনের সুযোগ পাচ্ছে যা অব্যাহত রয়েছে। আগামী আগস্ট ৩০, ৩১ ও সেপ্টেম্বর ১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাটর্ণী আলমগীর। ফোবানা সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন সাংবাদিক শাহিদ মোবাশ্বের।
প্রশ্ন: জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষাজীবন নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলুন!
অ্যাটর্ণী আলমগীর: সংক্ষেপে বলব যে আমার বেড়ে ওঠা গ্রামে এবং সেটা হচ্ছে বিক্রমপুরে। বিক্রমপুরের ভরাকর গ্রামে আমার জন্ম এবং কলমা স্কুলে আমার শিক্ষা জীবন শুরু। আমি স্কুল জীবন শেষ করে ১৯৭২ সালে ঢাকাতে আসি। এরপর ১৯৭৬-এ আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি হই এবং ৮১ সালে আমি আমেরিকায় আসি। এখানে এসে প্রথমে আমি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এমবিএ করি। এরপর হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ল করি ১৯৮৫ সালে। ইন্টারেস্টিংলি আমি যখন "ল" স্কুলে ভর্তি হই তখন যুক্তরাষ্ট্রের আজকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও তখন ঐ হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলেন। যাহোক আমি আইনে হাওয়ার্ড থেকে "ল" শেষ করি ১৯৮৯ সালে। তারপর আমি পরীক্ষা দিয়ে অ্যাটর্নি হই। এর পরেই অ্যাটর্ণী হিসাবে আমার কর্মজীবন ট্রায়াল অ্যাটর্ণী ও ইমিগ্রেশন অ্যাটর্ণীসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় "ল" প্র্যাকটিস করতাম।
প্রশ্ন: আপনার কর্মজীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু জানতে চাই!
অ্যাটর্ণী আলমগীর: আমি প্রথমে একটি "ল" ফার্মে লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমার কর্মজীবন শুরু করি। অতপর আমি অ্যাটর্ণী হই। এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার বাঙ্গালীসহ অন্যান্য দেশের লোকেরাও আমার ক্লায়েন্ট হয়। কর্মজীবনে আফ্রিকা, ইউরোপ ও বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোর অনেকেই আমার ক্লায়েন্ট হয়। আমার প্র্যাকটিসের ৮০ শতাংশই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন নিয়ে। এছাড়াও আমি অনেক বছর ডিভোর্স, পার্সোনাল ইনজুরি ও কনট্রাকচুয়াল এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ বিজনেস এগ্রিমেন্ট নিয়েও কাজ করেছি। মূলত আইনি বিষয়গুলির ফেডারেল প্র্যাকটিস ছিল সেগুলো পুরো যুক্তরাষ্ট্রে করতাম। আর যেগুলো ফ্যামিলি প্র্যাকটিস বা লোকাল প্র্যাকটিস ছিল সেগুলো ওয়াশিংটন ডিসি ও পেনসিলভিনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। প্রথমত আমি ওয়াশিংটন ডিসি কোর্ট, পেনসিলভিনিয়া সুপ্রিম কোর্ট বারের সদস্য, ডিসি কোর্ট অব আপিলের সদস্য, ট্রায়াল লইয়ার্স এসোসিয়েশনের সদস্য এবং আমেরিকান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স এসোসিয়েশনের সদস্য ছিলাম।  সব মিলিয়ে আমার পেশা জীবনে আমি এখন বলতে পারি কয়েক হাজার বাঙালীর জন্য আইনি সহায়তা দিয়েছি এবং কোর্ট প্রসিডিংসে রিপ্রেজেন্টেশন এবং ইমিগ্রেশনের জন্য রিপ্রেজেন্ট করেছি।
প্রশ্ন: সংখ্যাটা অনুমানিক কত হতে পারে?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: এই সংখ্যাটা আমি যদি ১০ হাজারও বলি তাহলেও অনেক কম বলা হবে। কারণ ২০০৪ সালের এক হিসেব অনুযায়ী আমি প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশীকে রিপ্রেজেন্ট করেছি। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ মুসলিম। এরা বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্ট ছিল। আর বাংলাদেশী কমপক্ষে ১০ হাজার লোককে আমি রিপ্রেজেন্ট করেছি এবং তাদের বংশ পরম্পরায় সেগুলো মাল্টিপ্লাই করলে এখন এক'শ হাজার হলেও আমি অবাক হব না যারা এদেশে আসছে এবং এই আসাটা অব্যাহত আছে। আগামী দিনগুলোতেও তাদের আসাটা অব্যাহত থাকবে। কারণ যারা ভাইবোনদের আনে তাদের ১০/১৫ বছর লেগে যায়। যারা এ দেশে একবার সিটিজেন হয়েছেন আইন অনুযায়ী তাদের মা-বাবা ভাই-বোন সকলকে আনতে পারেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাঙালীদের এখানে আসাটা বছরের পর বছর অব্যাহত থাকবে।
আর আমি এই যে হাজার হাজার বাঙালীকে সাহায্য করেছি এবং তা শুধু এই ওয়াশিংটন ডিসি এলাকায় নয়, বরং বিভিন্ন স্টেটের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট এবং ব্যবসায়ী যারা রেস্টুরেন্টের মালিক, গ্যাস স্টেশনের মালিক ও বিভিন্ন ধরণের বিজনেস-এর মালিক। তাদের অনেকেই এখন মাল্টি মিলিয়নিয়ার বনে গেছেন। তারা আমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাঙালী কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে আমি সেই সম্মানটা বরাবরের মত আজও পেয়ে থাকি।
প্রশ্ন: আপনি ফোবানা সম্মেলন-২০২৪-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন! বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: জ্বী হ্যাঁ, ফোবানার আমি এবারের চেয়ারম্যান৷ আর এই বিষয়টা আমার কাছে এখন অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, এটি আমেরিকায় বসবাসরত বাঙালীদের বৃহত্তর সংগঠন এবং এইটাই একমাত্র বৈধ সংগঠন যার ট্রেডমার্ক এবং ৫০১(সি) ট্যাক্স আইডি রয়েছে। এই ফোবানার যারা প্রতিষ্ঠাতা সেই প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সকলেই এই ফোবানার সাথে অ্যাডভাইজার হিসাবে আছেন। সুতরাং আমেরিকাতে যদি বৈধ ফোবানা বলা হয় তাহলে এটি তার মেইন ফোবানা এবং এই ফোবানা ১৯৮৭ এ এই ডিসিতেই গঠন করা হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন ভয়েস অব আমেরিকার জনাব ইকবাল বাহার চৌধুরী এবং মোহাম্মদ হোসেইনী। ফোবানার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন ইকবাল বাহার চৌধুরী এবং মোহাম্মদ হোসেইনী ছিলেন সেক্রেটারি। তারা আজও এই ফোবানার অ্যাডভাইজার হিসেবে আছেন। বাকি যারা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তারা সকলেই ফোবানার সাথে আছেন। আর সে কারণেই আমি গর্বিত। বোধ করি এই বৈধ সংগঠনের চেয়ারম্যান হয়ে পুরো আমেরিকাকে আমি প্রেজেন্ট করতে পারছি।
প্রশ্ন: এই সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে কিছু বলুন।
অ্যাটর্ণী আলমগীর: এবারের এই সম্মেলন আগামী আগস্টের ৩০, ৩১ এবং সেপ্টেম্বরের এক তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যার ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কেননা এবারের কনভেনশন হোস্ট করছে এই গ্রেটার ডিসি এলাকার সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব গ্রেটার ডিসি (বাগডিসি)। সেইসাথে এই এলাকার ৩০/৪০ টি সংগঠনসহ এখানকার বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা এই কনভেনশনের সাথে যুক্ত আছেন। এই কনভেনশনের মহাসম্মেলনকে সার্থক করার জন্য সবাই নিবেদিতপ্রাণ! সেই কারণে আমি মনে করি এবারের কনভেনশন অত্যন্ত সফল হবে।
প্রশ্ন: এবারের অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব কি?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: এবারের অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব হচ্ছে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে পরিকল্পনা সেটা আমরা ফোবানার মাধ্যমেও তুলে ধরার চেষ্টা করব এবং সারা আমেরিকাতে তরুন প্রজন্মকে একত্রিত করার জন্য আমরা ইয়ুথ ফোরাম করেছি।  এই ফোরামের ব্যাপক পরিকল্পনায় সারা আমেরিকার তরুণদের একত্রিত করে মূল ধারার রাজনীতিবিদদের সাথে পরিচিত করে তোলা যাতে করে তারাও মূল ধারার রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন ফোবানা প্রতিষ্ঠালগ্নে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের কথা বলা হয়েছিল তার কি কোন অংশ অর্জিত হয়েছে?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: প্রকৃতপক্ষে, ফোবানা প্রতিষ্ঠালগ্নে এর উদ্দেশ্য ছিল বছর শেষে সব বাঙালিদের এক মিলন মেলা করা এবং নিজেদের মধ্যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা। আমি মনে করি তার চেয়ে অনেক বেশী উত্থাপন এবং বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগে ফোবানার কার্যক্রম শুধুমাত্র কালচারাল অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন আমাদের মধ্যে সেমিনার, কাব্য জলসা ও মূল ধারার সেমিনার হচ্ছে, মূল ধারার রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর লোকেরা আসছে। আবার এখানে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে সেমিনার হচ্ছে। সুতরাং আমরা ফোবানার ব্যাপ্তি ব্যাপক আকারে করছি এবং এই ফোবানার প্রায় বাইশটি আউটস্ট্যান্ডিং কমিটি আছে যারা স্কলারশিপ দেয়ার পাশাপাশি ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্টুডেন্টদের ভর্তির বিষয়ে গাইড করছে। ফোবানার এই প্লাটফর্ম থেকেই অনেকে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে ও মিউজিকে সম্পৃক্ত হচ্ছে। সুতরাং আমরা ফোবানার প্রতিষ্ঠালগ্নের চেয়েও অনেক বেশী ও ব্যাপক আকারে এর রূপরেখা প্রবর্তনের চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: প্রায়ই অভিযোগ করা হয় যে ফোবানার সদস্যদের নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা নেই, ভাড়া করা সদস্যদের দিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: আমি বিষয়টিকে এভাবে দেখি যে, বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য স্থানীয় যে বাঙালিরা আছেন তারাই যথেষ্ট নয়। আর যেহেতু আমারা বাংলা শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরবর্তী প্রজন্মের বিষয় নিয়ে বিবেচনা করছি, সেক্ষেত্রে যে যে এলাকা থেকেই আসুক না কেন বা যারাই আসুক না কেন তারা যদি বাঙালি শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মূল ধারার সাথে কাজ করতে চায় বা পারে যা ফোবানার মূল উদ্দেশ্য সেখানে আমি কোন ব্যতিক্রম বা কোন বা সমস্যা দেখছি না। বরং বিভিন্ন এলাকা থেকে হরেক শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ এই ফোবানার এই সম্মেলনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।
প্রশ্ন: আরও অভিযোগ রয়েছে যে জনকল্যাণ বা সৃজনশীল কিছুই নেই এই সম্মেলনে। এ বিষয়টিকেই বা কিভাবে দেখবেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। আমি বলব সৃজনশীলতার এখানে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যেমন ধরুন আমদের নারী ক্ষমতায়নের যে  কমিটি আছে তারা পুরো আমেরিকার নারীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি কিভাবে নারীরা ক্ষমতায়িত হতে পারে সে বিষয়ে সেমিনার এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে। তেমনই আমাদের ইয়ুথ ফোরাম রয়েছে যারা তরুণদের অর্জন নিয়ে কাজ করে এবং কিভাবে তারা  মূল ধারায় যোগ দিতে পারে এবং আমরা কিভাবে তাদের উৎসাহিত করতে পারি তা নিয়ে কাজ করে। তেমনই ফোবানার একটি স্কলারশিপ কমিটি আছে। এই কমিটি প্রতি বছর ভাল শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। যদিও অংকটি তেমন বড় নয় তবুও আমরা কাজ করছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ভাল রেজাল্ট করুক। একইভাবে গত বছর থেকে আমরা  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোবানা থেকে স্কলারশিপ প্রবর্তন করেছি যাতে করে আট/দশ জন শিক্ষার্থী বিনামূল্যে পড়াশোনা করতে পারে। সুতরাং আমি মনে করি যে এগুলোও আমাদের অর্জন৷ সেইসাথে আমরা  যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূল ধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তদের আমন্ত্রণ করে সম্মানিত করি যাতে অন্যান্যরাও উৎসাহিত হয়।
প্রশ্ন: অনুষ্ঠানের নামে পকেট ভারি করা হয়, প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়না বলেও অভিযোগ রয়েছে! এ ব্যাপারে কি বলবেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: এখানে পকেট ভারী করার কোন সুযোগ নেই। কেননা এটাতো বৈধ ফোবানা। আমাদের ৫০১(সি) আছে এবং এখানে যত টাকা-পয়সা সংগৃহীত হয় আয়োজক কমিটি হোক আর এক্সিকিউটিভ কমিটি হোক সম্পূর্ণ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খরচ করে এবং বছর শেষে এক্সিকিউটিভ কমিটি (ইসি) আয়োজক কমিটির কাছে একটি অডিটেড রিপোর্ট চায়।  প্রথমত ইসি'র একটি পেনিও এদিক সেদিক করার কোন সুযোগ নেই। কারণ সব কিছুই রেকর্ডেড। একইভাবে আয়োজক কমিটিও যখন স্পনসরশিপ দেয়াসহ তহবিল সংগ্রহ এবং খরচ করে তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব বছর শেষে হয়।  সেখানে কোন অনিয়ম দেখা দিলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। যেমন গত ক'বছর আগে আমরা এই ওয়াশিংটন ডিসিতেই আয়োজক কমিটির কনভেনর এবং সেক্রেটারিকে এই আর্থিক অনিয়মের জন্য বহিষ্কার করেছি। আমরা রক্ত মাংসের মানুষ। অনিয়ম কিছুটা হবে যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আমরা সংবিধানের ধারা/উপধারা অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই এবং নেয়ার বিধান রয়েছে। সুতরাং কেউ যদি তহবিল অপব্যবহারের মত অন্যায় করে তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাকে ধরা হবে।
প্রশ্ন: সমাজে অবদান নেই এমন সব মানুষকেও ফোবানা থেকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়- এই ধরনের অভিযোগও রয়েছে ফোবানার বিরুদ্ধে।
অ্যাটর্ণী আলমগীর: সাধারণত যাদের সমাজিক অবদান রয়েছে আমরা তাদেরই অ্যাওয়ার্ড দেই। আর তা সামাজিকভাবে বা সাংস্কৃতিকভাবে যেভাবেই থাকুক না কেন। আর কোন অবদান না থাকলে অ্যাওয়ার্ড দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ ফোবানা এমন একটি সংগঠন যেখানে কারো ব্যক্তিগত পছন্দ বা সিদ্ধান্তে কাউকে অ্যাওয়ার্ড দেয়া সম্ভব নয়৷ আমাদের পাঁচ বা সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি অ্যাওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। কে অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য এই কমিটি তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করে। এখানে একক সিদ্ধান্তের কোন মূল্য নেই।  তারা সিদ্ধান্ত নেবে কে কোন ক্ষেত্রে অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য। তবে স্থানীয় আয়োজক কমিটি স্থানীয়দের কাজের উপর  অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। এতে আয়োজক কমিটির সাথে ইসি কমিটির কোন সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: ফোবানা চলছে গণতন্ত্র নয় বরং গ্রুপিং, আর্থিক লেনদেন আর ব্যক্তিকরণের মাধ্যমে - এ অভিযোগের বিষয়টির সাথে কি আপনি খন্ডন করবেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: মূল ধারার ফোবানাতে অনিয়মের কোনও সুযোগ নেই। কারণ এখানে সাধারণ সভা ও নির্বাচন হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটারদের তালিকা করা হয় এবং ভোটাররা ফোবানাকে ফি প্রদান করে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে এখানে কোন ব্যক্তিগত ভোট নেই। কোনও ব্যক্তি পয়সা দিলেই ভোটার হতে পারবে না। ওই ব্যক্তি যদি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হয় তাহলেই সে ভোট দিতে পারবে অথবা সে কাউকে অথারাইজড করলে তখন সে ভোট দিতে পারবে। সেটাও একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এবং এখানে নির্বাচন কমিশন আছে। নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে এবং সেই তারিখ অনুযায়ী ভোটারদের সংখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভোটার ফরম আছে। তারা সেই  ফরমগুলো পূরণ করে এবং নির্দিষ্ট তারিখে প্রার্থীদের ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় ভোট হয়। যারা বেশি ভোট পাবে তারাই নমিনেটেড হন এবং পরিশেষে নির্বাচিত হন। সুতরাং এখানে জালিয়াতি বা কারচুপির কোন সম্ভাবনাই নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কাউকে বানাতে পারবে না। অন্য কোন ফোবানায় বা ভুয়া ফোবানায় এসব সম্ভব যেখানে যা ইচ্ছে তাই করা যায়। কিন্তু আমাদের এই বৈধ ফোবানায় কারচুপির কোন অবকাশ নেই।
প্রশ্ন: ফোবানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে মানব পাচারের করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে! বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: প্রথমত আমরা যে ফোবানার সাথে জড়িত সেই ফোবানায় কেউ এই ধরণের মানব পাচারের সাথে জড়িত থাকলে এই প্রতিষ্ঠান এতদিন টিকে থাকত না। এটা মানব পাচারের একটি কারখানা হত। কিন্তু আমাদের ফোবানাতে কে কাকে আমন্ত্রণ করছে এবং সেই আমন্ত্রিত অতিথি এখানে আসলো কি না এবং সেই অতিথি আবার ফিরে গেল কিনা আমরা সেটা মনিটর করি। সুতরাং এখানে মানবপাচারের কোন সুযোগ নেই। তবে অতীতে কোন কোন আয়োজক কমিটি এক্সিকিউটিভ কমিটির অনুমোদন ছাড়া আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছে এবং তারা ধরাও পড়েছে। অতীতে তাদের অতিথিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সুতরাং এই অভিযোগ যে একেবারে অমূলক তাও নয়। এই অভিযোগের কিছুটা সত্যতা থাকতে পারে। তবে আমরা এ ব্যপারে স্বচ্ছতা অবলম্বন করি এবং আমরা যাদের আমন্ত্রণ করি তারা অনুষ্ঠানের পর ফিরে যান। আমরা আমন্ত্রিত অতিথিদের যাতায়াতের বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটর করি। এখানে টাকা পয়সা লেনদেনের কোন সম্ভাবনা নেই।
প্রশ্ন: ফোবানা বিভক্তির কারণগুলো কি কি? এজন্য কাকে দায়ী করবেন? এই বিভক্তি নিরসনের কি কোন উপায় আছে বলে মনে করেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: ফোবানা বিভক্তির বিষয়টিকে আমি ঠিক এভাবে দেখছিনা। ফোবানা থেকে যারা একবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থার শিকার হন বা অন্যায় করেন বা ফোবানার আইন ভঙ্গ করেন বা মানবপাচার করে অথবা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এইসব জালিয়াতি করার চেষ্টা করেন তাদেরই আমরা বহিষ্কার করি। আর যাদেরই আমারা বহিষ্কার করি তারা আরেক নাম দিয়ে ফোবানা করা শুরু করে দেয়। আর আমাদের এই ফোবানা মূল ফোবানা যা উনিশ শত সাতাশি সালে গঠিত। এই মেইন ফোবানার কোন বিভক্তি হয়নি। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে বহিষ্কার করেছি। তারা বহিষ্কৃত হয়ে অন্য নাম দিয়ে বা ব্যক্তি বিশেষের নাম দিয়ে ব্যক্তি ফোবানা করছে। ফোবানা কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে হয় না। এটা হচ্ছে সংগঠনগুলির সংগঠন। অর্থাৎ ফোবানা হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের ফেডারেশন। এখানে কোন ব্যক্তির সংগঠন ফোবানার সদস্য হতে পারেনা। আপনারা দেখবেন অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ফোবানা করছে। সুতরাং সেসব পুরোপুরি অবৈধ ফোবানা এবং দেখবেন যে তাদের অধিকাংশকেই আমরা বহিষ্কার করেছি। তারা বহিষ্কৃত হয়ে নিজেদের নামে ফোবানা করছে। অথচ তাদের কোনও সংগঠন নেই।
প্রশ্ন: ফোবানা অনুষ্ঠানে আরও বেশী প্রবাসী বাংলাদেশীকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: এবার আমরা প্রচারণাটার বিষয়টিকেই বেশী জোর দিচ্ছি। বিভিন্ন স্টেটের পরবর্তী প্রজন্মকে সক্রিয় এবং মূলধারার লোকজনকে জড়িত করতেই এই প্রচারণার বিষয়টি ব্যাপকভাবে করছি যেন ফোবানার প্রসার স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। কারণ গত বছর আমাদের ফোবানায় প্রতিদিন প্রায় পাঁচ/ছয় হাজার দর্শকের উপস্থিতি ছিল। সুতরাং এবারও অধিক সংখ্যক উপস্থিতি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। একারণে আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি যেন তারা  বিবেচনা করেন যে এটাই  প্রকৃত ফোবানা এবং  আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের উভয় সরকারকেই এই ফোবানাকে বৈধ ফোবানা মনে করার কারণ জানিয়েছি। কারণ আমাদের ফোবানা বৈধ ফোবানা কেননা আমাদের ৫০১(সি) ও ট্রেডমার্ক আছে।
প্রশ্ন: এবারের ফোবানায় অতিথি কারা থাকছেন?
অ্যাটর্ণী আলমগীর:মোটামুটিভাবে স্কটল্যান্ড থেকে সম্মানিত পার্লামেন্ট সদস্য ফয়সাল চৌধুরী ও ভার্জিনিয়ার স্টেট সিনেটর সাদ্দাম সেলিমসহ  বিভিন্ন স্টেট থেকে স্টেট সিনেটর ও ইউএস সিনেটরের আসার কথা রয়েছে।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতের ফোবানার সফল আয়োজনে আপনার মতামতগুলো কি?
অ্যাটর্ণী আলমগীর: আমার পরামর্শ হবে যেখানেই ফোবানা আয়োজন করা  হোক না কেন স্থানীয়ভাবে যেন কোনও দলাদলি না থাকে। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা লোকেরা যদি এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ না করে সেখানে তহবিল সংগ্রহ করাসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এতে  কাজের গতিও কমে যায়। আবার একই সময়ে বিভিন্ন দল- উপদল অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন করেও ফোবানার সফল আয়োজনকে ব্যাহত করতে পারে। সে কারণে আমার অনুরোধ থাকবে সকল বিতর্কের উর্ধে থেকে স্থানীয় সকল সংগঠনকে সাথে নিয়েই যেন একত্রে কাজ করতে পারে।ধন্যবাদ আপনাকে!
আপনাকেও!
 সৌজন্যে : প্রথম আলো ইউএসএ