যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘পাঠাও’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফাহিম সালেহ (৩৩) হত্যাকাণ্ডে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২৫ বছর বয়সী টাইরেস হাসপিলকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের একটি আদালতের বিচারক তাকে এই সাজা প্রদান করেন।
২০২০ সালের ১৩ জুলাই ম্যানহাটনের লোয়ার ইস্ট সাইডের হিউস্টন স্ট্রিটের অভিজাত ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন ফাহিম সালেহ। তার সাবেক সহকারী হাসপিল চার লাখ ডলার চুরি করার পর দোষ লুকাতে তাকে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর ইলেকট্রিক করাত দিয়ে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে। নিজের ফরাসি প্রেমিকাকে প্রভাবিত করার জন্য হাসপিল চার লাখ ডলার চুরি করার পরে নিজেকে রক্ষার জন্য ফাহিম সালেহকে খুন করে।
ফাহিম সালেহকে নৃশংসভাবে হত্যার জন্য হাসপিলের বিরুদ্ধে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার প্রায় এক ঘন্টা আদালতে যুক্তিতর্ক শেষে হাসপিলকে ৫০ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মত দেয় জুড়ি বোর্ড। পরে তাকে ৪০ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
প্রসিকিউটররা জানান, ফাহিম সালেহর প্রায় চার লাখ ডলার আত্মসাৎ করেছিলেন হসপিল। এটা লুকাতে ফাহিমকে হত্যা করেন তিনি। ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ হাসপিলকে দোষী সাব্যস্ত করে বলেন, হাসপিল দুঃখজনকভাবে ফাহিমের জীবনকে সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছেন। ফাহিম সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিবাসী পরিবারের এই সদস্য একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয়ী ছিলেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফাহিম সালেহ রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ছিলেন। নাইজেরিয়ার রা গোকাদা প্ল্যাটফর্মের প্রধান নির্বাহী তিনি। ফাহিম সালেহ ম্যানহাটনভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদারও ছিলেন।
নিউইয়র্কের নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ২০২০ সালের ১৩ জুলাই খুন হন ফাহিম। হত্যার পর তার দেহ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে টুকরা টুকরা করা হয়। এ কারণে হাসপিলকে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র তখন জানায়, ফাহিমের চার লাখ ডলার সরিয়ে ফেলেছিলেন হাসপিল। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ফাহিম ওই অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। হাসপিল ধাপে ধাপে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আবার অর্থ চুরি করছিলেন। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেওয়ার হুমকি দেন ফাহিম। এরপরই তিনি এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
ফাহিম সালেহ সৌদি আরবে একটি বাংলাদেশি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নিউইয়র্কের রচেস্টারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরুর আগে তার বাবা-মা কাজের জন্য ঘন ঘন বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি অল্প বয়স থেকেই নিজেকে প্রোগ্রামার বানাতে চেয়েছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। যেমন তার পরিবারের জন্য একটি ওয়েবসাইট, একটি কিশোর সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এবং একটি প্র্যাঙ্ক ডায়াল পরিষেবা প্র্যাঙ্কডায়াল, যা ১ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যবসা করেছে। যখন তিনি বড় হন, সালেহ বলেছিলেন যে তিনি এমন কিছু তৈরি করতে চান যা ‘মানবতার বৈধ মূল্য যোগ করে’। হাইস্কুলে থাকা অবস্থায় ফাহিম সালেহ তার প্রথম প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। তিনি প্র্যাঙ্কডায়াল থেকে আয় তার পরবর্তী উদ্যোগের তহবিলে ব্যবহার করেছিলেন। প্র্যাঙ্কডায়াল কিছুটা বিতর্কিত ছিল। কারণ এটি হয়রানির হাতিয়ার হিসাবে অপব্যবহার করা হয়েছিল।
ফাহিম সালেহ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও নেপালের জনপ্রিয় রাইড কোম্পানি পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানিটির মূল্য ছিল ১০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে ফাহিম সালেহ নাইজেরিয় মোটরবাইক ট্যাক্সি কোম্পানি গোকাডার সাথে কাজ শুরু করেন, যার লক্ষ লক্ষ ডলার তহবিল ছিল এবং দেশে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ২০২০ সালে লাগোসের কর্তৃপক্ষ মোটরবাইক ট্যাক্সি নিষিদ্ধ করার পর কোম্পানিটি একটি ধাক্কা খেয়েছিল। ফাহিম কলম্বিয়ার পিক্যাপ নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতেও বিনিয়োগ করেছিলেন।
বন্ধুরা সালেহকে ‘উন্নয়নশীল বিশ্বের ইলন মাস্ক’ বলে ডাকতেন। তার মোট সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বলে অনুমান করা হয়।