নিউইয়র্কে চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইনকের (চট্টগ্রাম সমিতি) দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন-২০২৪-এর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৫ অক্টোবর শুক্রবার নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করে। তবে এই ফল প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেল।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ খালেদ, নির্বাচন কমিশনার যথাক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রকাশ মোহাম্মদ হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম প্রকাশ হারুন, সাংবাদিক শাহাব উদ্দিন সাগর, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল হান্নান চৌধুরী বৈঠক করেন। ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ ভোট গণনাসহ চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এ বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে কমিশনের পাঁচ সদস্য স্বাক্ষর করে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। এ ফলাফল নির্বাচনে অংশ নেয়া প্যানেল, প্যানেলের প্রতিনিধি, অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি এবং গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
২৭ অক্টোবর রোববার নির্বাচন কমিশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২০ অক্টোবর রোববার চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইনকের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্কের জ্যামাইকা, ব্রুকলিন ও কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ড এবং পেনসেলভেনিয়ার আপার ডারবি কেন্দ্রে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট গণনা শেষে ব্রুকলিন কেন্দ্রে নির্বাচনের অর্ন্তবর্তী ফল প্রকাশ করা হয়। ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেড ৬টি চ্যালেঞ্ছ ভোট গণনা বাদ রেখে এ অর্ন্তবর্তী ফলাফল প্রকাশ করে। ৬ টি চ্যালেঞ্জ ভোটের মধ্যে ৪ টি ছিল ডিজিটাল আইডি দেখিয়ে ভোট প্রদান, ১ টি ভোটার তালিকা নাম উঠানোর সময় স্পেলিং ভুল ও অপরটি লাইফ মেম্বারের সনদ প্রদর্শন করা হলেও ভোটার তালিকায় নাম না থাকা। নির্বাচনের অর্ন্তবর্তী ফলাফল প্রকাশ করার সময় দুই প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা ব্রুকলিন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য ওই সময় বক্তব্য রাখেন এবং অর্ন্তবর্তী ফলাফল প্রকাশের আগে প্রায় এক ঘণ্টা রুদ্ধধার বৈঠক করেন। বৈঠকে চূড়ান্ত ফলাফল দেয়ার পূর্বে ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোট গণনার ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গত ২২ অক্টোবর লাইফ মেম্বার এবং ভোটার তালিকায় টাইপিং মিস্টেকের ভোটারের ব্যাপারে তথ্য যাচায়ের জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির কাছে চিঠি প্রদান করে নির্বাচন কমিশন। একই দিন নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য ব্যাপক স্বচ্ছতার লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জ ভোটগুলোর তথ্য যাচাইয়ে উদ্যোগ নেয়। তারা চারটি চ্যালেঞ্জ ভোট তদন্ত করে। স্বাক্ষর মিল না থাকার কারণে নির্বাচন কমিশন একটি ভোট বাতিল করে।
২৪ অক্টোবর অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির কাছ থেকে চিঠির জবাব পায় নির্বাচন কমিশন। এতে লাইফ মেম্বারের ব্যাপারে তথ্য না পাওয়া এবং একজন ভোটারের টাইপিং মিস্টেকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ওই দিনই নির্বাচন কমিশন ৪ টি ভোট গণনা করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ব্যাপারে ইলেশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছে চিঠি দেয়। গত ২৫ অক্টোবর ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রাপ্ত হয়ে তা প্রকাশ করে। যা নির্বাচনের প্যানেলের প্রধান, প্যানেলের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এ ফলাফল স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ১৪ জুন ২০২৪ ইংরেজি নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির কাছ থেকে। এর পর থেকে নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে। যাতে সর্বস্তরের ভোটররা ইতোমধ্যে সন্তুষ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেক সদস্য ‘ভলান্টিয়ারি জব’হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব নেয়ার শুরু থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন, অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি ও নির্বাচন কমিশন মিলে ভার্চুয়াল এবং উপস্থিতিসহ মোট ১৭টি সভা করে। এসব সভায় নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের পদ্ধতি, আচরণবিধি, বাজেটসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ ভোট কি: চ্যালেঞ্জ ভোট নির্বাচন প্রক্রিয়ার একটি বৈধ পদ্ধতি। কোন ভোটারের আইডেন্টি অর্থাৎ পরিচয় নিয়ে (ভোটার লিস্টের সাথে গরমিল বা আইডি জটিলতা ইত্যাদি) পোলিং বা প্রিসাইডিং অফিসার ওই ভোটারকে চ্যালেঞ্জ করলে, ওই ভোট চ্যালেঞ্জ ভোট হিসাবে ম্যানুয়ালি নেওয়া হয়। যদি দুই বা ততোধিক প্রার্থীর মধ্যে সর্বমোট চ্যালেঞ্জ ভোটের সমান বা কম ভোটের পার্থক্য থাকে তখন ওই ভোটারের পরিচয় যাচাই বাছাই করে সঠিক প্রমাণিত হলে ভোটগুলো বৈধ ভোট হিসেবে গণনা করে ফাইনাল ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
৬ টি চ্যালেঞ্জ ভোট: চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইনকে চ্যালেঞ্জ ভোটের বিধান আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। কোনো ভোটার ফিজিক্যাল আইডি প্রদর্শনে ব্যর্থ, মেম্বারশিপ ফরম জমা দেয়ার পরও মেম্বার না হওয়াসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন চ্যালেঞ্জ ভোট গ্রহন করে।
গত ২০১৪ সালের নির্বাচনেও ২১ টি চ্যালেঞ্জ ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। এবারও ছয়টি চ্যালেঞ্জ ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ফিলাডেলফিয়া কেন্দ্রে ডিজিটাল আইডি প্রদর্শন করায় চারটি চ্যালেঞ্জ ভোট নেয়া হয়। আর জ্যামাইকা কেন্দ্রে নাম ত্রুটিজনিত কারণে নেয়া হয় একটি চ্যালেঞ্জ ভোট। ব্রুকলিন কেন্দ্রে লাইফ মেম্বারের সনদ আছে কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় সেটিও চ্যালেঞ্জ ভোট আকারে নেয়া হয়। এসব ভোট প্যাকেটবন্দি করে ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইডেট ভোটের দিনই তাদের জিম্মায় নিয়ে যায় এবং সেগুলো তারা তাদের প্রক্রিয়া ও আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে গণনা করে চূড়ান্ত ফল প্রদান করে নির্বাচন কমিশনের কাছে। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন তা চূড়ান্ত ফল হিসেবে প্রকাশ করে।
চ্যালেঞ্জ ভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত: ব্রুকলিন কেন্দ্রের একটি চ্যালেঞ্জ ভোট এবং জ্যামাইকা কেন্দ্রের একটি চ্যালেঞ্জ ভোটের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যাচাই বাছাইয়ের জন্য অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির সহযোগিতা নেয়।
গত ২২ অক্টোবর ২০২৪ ইংরেজি অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটিকে এ নিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়। গত ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ইংরেজি অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি একটি ভোটারের ব্যাপারে ইতিবাচক এবং আরেকটি ভোটারের ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত না পাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।
ফিলাডেলফিয়ার চ্যালেঞ্জ ভোট তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন: নানা ধরণের অভিযোগ উঠার পর নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় ফিলাডেলফিয়ার ভোটগুলোর স্বচ্ছ তদন্ত করার। গত ২২ অক্টোবর ২০২৪ অতি স্বচ্ছতায় সে তদন্ত সম্পন্ন হয়। চারজনের চ্যালেঞ্জ ভোটের মধ্যে স্বাক্ষর না মেলায় একজন নারী ভোটারের চ্যালেঞ্জ ভোটটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশরের পাঁচ জন সদস্য একমত হয়ে চারটি ভোটের ব্যাপারে গণনা করে ফাইনাল ফলাফল প্রকাশ করতে ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছে চিঠি প্রদান করে। গত ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ইংরেজি ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেড তাদের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভোটগুলো গণনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে ফলাফল প্রকাশ করে। যা চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে গণমাধ্যমে প্রকাশ এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রদান করা হয়।
নো আইডি, নো ভোট: নির্বাচন কমিশন ভোটের আগেই সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, ‘নো আইডি, নো ভোটের’ ব্যাপারে। নির্বাচনের রুলসে উল্লেখ করা হয় ‘ইনহ্যান্ড’ আইডি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করার জন্য। ‘নো আইডি, নো ভোট’ এ বিধির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয় কোনো ধরনের আইডি ছাড়া যাতে কেউ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ এবং ভোট প্রদান করতে না পারে, কিন্তু ‘নো আইডি, নো ভোট’ মানে ডিজিটাল আইডি যা স্মার্ট ফোনে সংরক্ষিত আইডিকে অগ্রহণযোগ্য বুঝানো হয়নি। চারটি চ্যালেঞ্জ ভোটের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে।
প্রত্যেক কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনার না থাকা প্রসঙ্গ: নির্বাচনের তিন দিন আগে নির্বাচন কমিশন, অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি, নির্বাচনের প্যানেলের প্রধান, স্বতন্ত্র প্রার্থী, প্যানেলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আনোয়ারের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ খালেদ নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব বণ্ঠন এবং কে কোন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন তা উল্লেখ করেন পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনাররা ব্রুকলিন ও জ্যামাইকা কেন্দ্রে থাকবেন বলেও জানান।
চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায় ২ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তাহের-আরিফ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ আবু তাহের। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী একই প্যানেলের মো: আরিফুল ইসলাম ২৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ আবু তাহের পেয়েছেন ১০৩০ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ- মাসুদ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাকসুদুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ১০২৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো: আরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ৯৬২ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহাম্মদ মাসুদ এইচ সিরাজী পেয়েছেন ৯৩৩ ভোট। সিনিয়র সহ সভাপতি পদে মাকসুদ-মাসুদ পরিষদের মোহাম্মদ মুক্তাদির বিল্লাহ ১১০৯ ভোট পেয়ে বিজীয় হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী নূর পেয়েছেন ৯২০ ভোট। সহ সভাপতি পদে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের আলী আকবর বাপ্পী ১০৬৮ ভোট, মোহাম্মদ আইয়ুব আনছারী ১০২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফরিদ আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন ৯৭৫, হাজী মোহাম্মদ টি আলম পেয়েছেন ৯৫০ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের মো: আরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ৯৬২ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ মাসুদ এইচ সিরাজী পেয়েছেন ৯৩৩ ভোট। স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী (খোকন) পেয়েছেন ১৪৫ ভোট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া ১০৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মো: কলিম উল্যাহ পেয়েছেন ৯৫৬ ভোট। সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের মো: হারুন মিয়া ১০৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তাহের-আরিফ প্যানেলের মো: নওশাদ কামাল পেয়েছেন ৯৯৫ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের মো: শফিকুল আলম ১ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাহিত হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০১৪ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের মোহাম্মদ সুমন উদ্দিন পেয়েছেন ১০১৩ ভোট। সহকারী কোষাধ্যক্ষ পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের মোহাম্মদ নুরুল আমিন বিজীয় হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০৩১, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের তমাল কান্তি চৌধুরী পেয়েছেন ৯৮১ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাকসুদ-মাসুদ পরিষদের মোহাম্মদ ফরহাদ বিজয়ী হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০৩২। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাহের-আরিফ প্যানেলের মো: তানিম মহসিন পেয়েছেন ৯৮৯ ভোট। দপ্তর সম্পাদক পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের অজয় প্রসাদ তালুকদার এক ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১০০৪। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের শিমুল বড়ুয়া পেয়েছেন ১০০৩ ভোট। সহকারী দপ্তর সম্পাদক পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের ইমরুল কায়সার ১৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০২২, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (আতিক) পেয়েছেন ১০০৩ ভোট। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ২৮ ভোট বেশি পেয়ে তাহের-আরিফ প্যানেলের এনামুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০২১, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ পরিষদের সুশান্ত দত্ত পেয়েছেন ৯৯৩ ভোট। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের মোহাম্মদ জাবের শফি নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি পেয়েছেন ১০২২ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলে মো: আবদুল অদুদ পেয়েছেন ৯৯৪ ভোট। সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের আকতার উল আজম নির্বাচিত হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০৩৪, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো: আকতার হোছাইন পেয়েছেন ৯৭৯ ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে তাহের-আরিফ প্যানেলের মোহাম্মদ ইসা ৬ ভোট বেশি পেয়ে বিজীয় হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০১৩, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের মো: জাহেদুল আজম (জাহেদ) পেয়েছেন ১০০৭ ভোট। কার্যকরী সদস্য পদে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের তিন জন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন মোহাম্মদ শওকত আলী ১০৪৮ ভোট, মোহাম্মদ শাহ আলম ১০২১ ভোট, নুরুস সোফা ১০১৯ ভোট। এছাড়া তাহের-আরিফ প্যানেলে তিন জন কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ নাসির চৌধুরী পেয়েছেন ৯৯৬ ভোট, পল্লব রায় পেয়েছেন ৯৬৫ ভোট এবং মোহাম্মদ মহিম উদ্দিন পেয়েছেন ৯৬০ ভোট।
মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের ফল প্রত্যাখ্যান : নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাকসুদুল এইচ চৌধুরী এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রবাসের বৃহত্তম সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি আজ আবারো কিছু গ্রাম্য মোড়লের ছোবল পড়েছে। এই ছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে সকল প্রবাসীদের সহযোগিতা দরকার! গত রোববার অনুস্টিত নির্বাচনে আমি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি কিন্তু নির্বাচনের ৬ দিনের মাথায় নির্বাচন কমিশন সম্পুর্ন অন্যায়ভাবে নির্বাচনের দিন ঘোষিত ফলাফল পরিবর্তন করে গোপন জায়গায় বসে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একতরফা একটি ফলাফল ঘোষনা করেছে! এই ফলাফলে আমাকে ২ ভোটে বিজিত ঘোষণা করা হয়েছে, তা সম্পুর্ন বেআইনি, অনৈতিক, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি এবং সংগঠনের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।
কেন তিনি এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন তার কিছু কারণ উল্ল্যেখ করে মাকসুদ চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন-
১) নির্বাচনের পুর্বে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনী বিধিমালা (লিখিত) ঘোষণা করেছিল, সে বিধিমালায় পরিস্কার করে লেখা আছে ভোট দিতে হলে ভোটারদের আইডি হাতে তৈরী রাখতে হবে (নির্বাচনের দিনের বিধিমালা নাম্বার ৩-এ)।
২) উক্ত বিধিমালা নিউইয়র্কের সব কয়টি কেন্দ্রে পুরোপুরি মানা হলেও পেনসেলভেনিয়াতে মোটেও মানা হয়নি, যা ইতিপুর্বে আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছি!
৩) নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী রিয়েল আইডি এবং ভার্চ্যুয়াল আইডি একই মান, যদিও নির্বাচন কমিশন আমাকে মৌখিকভাবে বলেছিল কোন ভার্চ্যুয়াল আইডি হবে না, তারপরও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই তাদের কথা সঠিক। তাহলে যারা ভার্চ্যুয়াল আইডি দিয়ে ভোট প্রদান করেছে সে সকল ভোট চ্যালেঞ্জ ভোট হিসেবে গ্রহণ করা হলো কেন?
৪) নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত এবং প্রকাশিত নির্বাচনী বিধিমালায় কোথাও চেলেঞ্জ ভোট নেয়ার কথা বা চ্যালেঞ্জ ভোটের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
৫) নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোট গ্রহনণর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল ঘোষণায় চারটি ভোটের হিসাব দেখা গেলেও বাকি দুটি ভোটের কোন তথ্য কাউকে জানায়নি।
৬) ঘোষিত বিতর্কিত চ্যালেঞ্জ ভোট আমার কোন প্রতিনিধি ছাড়া কিভাবে গণনা করা হলো?
৬) পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচন কমিশন কোন ভোটারের বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, যা নজিরবিহীন!
৭) রোববার নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের কম্পেলেইন/ objection কমিশন বরাবর এবং তাদের ভাড়া করা নির্বাচনী কোম্পানিকে অফিসিয়ালি জানালেও আজ পর্যন্ত তার কোন উত্তর নির্বাচন কমিশন আমাদের দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি!
৮) নির্বাচন কমিশনকে নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি, যেখানে চারটি ভোটের কারণে পুরো নির্বাচনের ফল প্রশ্নবিদ্ধ সে চারটি ভোট তদন্তে অথবা ঐ চারটি ভোটের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির থেকে কোন রকম পরামর্শ বা সহযোগিতা না নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজেদের বিতর্কিত করেছেন।
৯) অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির স্বাক্ষর করে দেয়া ভোটার তালিকার বাইরে আরো দুজন ভোটারকে ভোটার তালিকায় কিভাবে অন্তর্ভুক্তি করল নির্বাচন কমিশন?
১০) কোন স্কুল আইডি দিয়ে ভোট দিতে পারবে না বললেও ব্রুকলিন কেন্দ্রে কি করে স্কুল আইডি দিয়ে ভোট নেয়া হলো?
১১) চট্টগ্রাম সমিতির নিজস্ব অফিস থাকা সত্বেও কাউকে না জানিয়ে এমনকি কোন মিডিয়াকেও না জানিয়ে এত বড় গুরুত্বপুর্ণ ভোটের ফল গোপন জায়গা থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে কেন ঘোষণা করা হলো?
এ ছাড়া আরো অনেক অনিয়ম নির্বাচন কমিশন করেছে, যা সময়মতো বলা হবে!
প্রবাসের সকল চট্টগ্রামবাসী এবং অন্যান্য অঞ্চলের সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কমিশন (বাংলাদেশ সোসাইটিসহ) ও সমাজের বিশেষজ্ঞদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি আমাদের নির্বাচন কমিশন উপরের সকল প্রশ্ন সমুহের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারে, তাহলে আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তা মাথা পেতে নেব। অন্যথায়, গত ২০ অক্টোবর রাত ১১টায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ফল অনুযায়ী চট্টগ্রামবাসীর ভোটে আমি চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচিত সভাপতি। সুতরাং সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ চট্টগ্রাম সমিতিকে আর বাজারে তুলবেন না। আসুন সবাই বসে সমস্যার সমাধান কর। অন্যথায় সংগঠনের ক্ষতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ করেন মাকসুদ চৌধুরী।