যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক হওয়া অনেকের কাছে ‘আমেরিকান ড্রিম’ হলেও বাস্তবে এটি দীর্ঘ, জটিল এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। সাধারণত কোনো সরল ‘লাইনের’ মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। অধিকাংশ অভিবাসীর জন্য বৈধ পথ সীমিত, কঠোর নিয়মের অধীনে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়াজাত।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাধারণত তিনটি পথে ঘটে। চাকরি, পরিবার পুনর্মিলন বা মানবিক সুরক্ষা। প্রতিটি পথে নির্দিষ্ট কোটা, যোগ্যতা মানদণ্ড এবং ব্যাপক কাগজপত্র প্রয়োজন। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে এসব পথ আরও কঠোর হয়ে ওঠে। নতুন নিয়ম, উচ্চ ফি, স্বল্প সময়ের কাজের অনুমতি এবং কিছু গ্রুপেরনিষিদ্ধ শরণার্থী ও আশ্রয় প্রার্থী আবেদনের প্রক্রিয়া বন্ধ করার কারণে নাগরিকত্ব পাওয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, নাগরিকত্ব অর্জনের সময়কালও ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বাভাবিক নিকটতম আত্মীয় স্বামী/স্ত্রী, বাবা-মা বা ছোট সন্তান প্রায় ৫–৭ বছরে নাগরিক হতে পারে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বা ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে ভিসার ব্যাকলগ ২০ বছরের বেশি হতে পারে, যার ফলে পুরো প্রক্রিয়ায় ২৫ বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। কিছু উচ্চ-দক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে শুধু গ্রিন কার্ডের জন্যও কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়।
তথ্য বলছে, এতদূর পৌঁছে নাগরিকত্ব পরীক্ষায় বসার পরও কঠোর নতুন নিয়মের মুখোমুখি হতে হয়। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে নাগরিকত্ব দিবসে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ নতুন করে কঠিন পরীক্ষা প্রবর্তন করেছে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও বাধার কারণে পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়, কর্মজীবন ব্যাহত হয় এবং মার্কিন অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী জনসংখ্যা এক মিলিয়ন কমেছে। যা ১৯৬০-এর দশক থেকে প্রথমবারের মতো ঘটেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাজের অনুমতি বাড়ানো, অভিবাসন আদালতের প্রক্রিয়া সহজ করা, ব্যাকলগ কমানো এবং বৈধ পথ সম্প্রসারণ করলে নাগরিকত্ব প্রাপ্তি সহজ করা সম্ভব। নাগরিকত্ব দিবসে ইতিহাস স্মরণ করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাস্তবসম্মত সমাধানের মাধ্যমে অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্বের পথ খুলে দেওয়াও জরুরি।